বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট (বিল্যান্সার ডট কম)
আচ্ছালামু আলাইকুম প্রিয় দর্শক - দৈনিক শিক্ষা ব্লগর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আজকে আমি আপনাদের মাঝে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট (বিল্যান্সার ডট কম) নিয়ে আলোচনা করব।
চারদিকে যখন চাকরির বাজারে হাহাকার চলছে ঠিক তখনই আউটসোর্সিং খাতে দেখা যাচ্ছে বেকারত্ব হ্রাসের অপার সম্ভাবনা। ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে আপনিও কোনো একটা নির্দিষ্ট মাধ্যমে কাজ শিখে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং করে বর্তমানে দেশের অনেক বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়েছে। ইতোপূর্বে দেশের সরকার কিংবা নেতৃস্থানীয় কেউ এই ফ্রিল্যান্সিং খাত কে নিয়ে ওইভাবে না ভাবলেও বর্তমানে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ফ্রিল্যান্সিংকে আলাদা গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
যার প্রেক্ষিতে কিছু তরুণ যুবকের উদ্যোগে আর সরকারী সহায়তায় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট বিল্যান্সার ডট কম নামে এক আউটসোর্সিং সাইট তৈরী করা হয়েছে যাতে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করতে সুবিধা হয়।
আজকে আমরা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট বিল্যান্সার ডট কম এর আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করবো –
বিল্যান্সার ডট কম এর যাত্রা শুরুর কথা
ফ্রিল্যান্সিং এর শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এর ফ্রিল্যান্সাররা কাজের মানের দিকে সবসময়ই এগিয়ে ছিল।তারই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর বৃহৎ বৃহৎ অনেক দেশকে পিছনে ফেলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশ শীর্ষ দশে ছিলো।
বাংলাদেশ এর ফ্রিল্যান্সারদের কাজের মান এতো এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে কোনো অনলাইন মার্কেটপ্লেস পরিচালিত হয় না , বাংলাদেশিদের কোনো নির্দিষ্ট কাজের সাইট নেই মূলত এই ভাবনা থেকেই ২০১৩ সালে “আমার ডেস্ক” নামের সাইট খোলেন মোঃ শফিউল আলম নামের এক বাংলাদেশি যুবক।
তবে তখন ওইভাবে প্রচার প্রসার পাইনি ওই সাইটটি। খোলার পর ঢিমেতালেই চলছিলো দেশের প্রথম ফ্রিল্যান্স মার্কেট সাইটটি। পরবর্তীতে তিনি যখন দেশে ফ্রিল্যান্সিং এর জোয়ার দেখতে পান , তখন ভাবলেন যদি আমাদের দেশের সরকার থেকে কোনো প্রকার সাহায্য পাওয়া যেত তবে হয়তো তার সাইটটি দেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দারুন এক উপযোগী ওয়েবসাইট হতো।
যেই ভাবা সেই কাজ , তিনি এর পর দেশের তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে যোগাযোগ করে নিজের ভাবনা তার সাথে শেয়ার করেন। তার সাথে যোগাযোগের পর প্রতিমন্ত্রী নিজেও খুব উৎসাহের সাথে সব শুনেন এবং এই সাইটের যা যা সহযোগিতা লাগে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন।
প্রতিমন্ত্রী থেকে আশ্বাস পাওয়ার পর এই “আমার ডেস্ক” নাম পাল্টে “বিল্যান্সার ডট কম” এ পরিণত হয়।যে বিল্যান্সার ডট কম বর্তমানে লাখো বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার এর আয়ের অন্যতম মাধ্যম।
বিল্যান্সার ডট কম এ কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি
বিল্যান্সার ডট কম সাইটে মূলত বাংলাদেশের যেসব ফ্রিল্যান্সিং কাজ থাকে ওইসবই দেয়া হয়। এই সাইটে আউটসোর্সিং এর প্রায় সব ধরনের কাজের এই চাহিদা আছে। এডমিন এন্ড কাস্টমার সাপোর্ট ,
ডিজাইন প্রিন্টিং এন্ড মাল্টিমিডিয়া ,ইকমার্স ,একাউন্টিং লিগ্যাল এন্ড কনস্যাল্টাসি, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড আর্কিটেকচার এসব ক্যাটাগরির কাজেরই প্রাধান্য বেশি থাকে ।
তবে এছাড়াও সেলস এন্ড মার্কেটিং , এসইও এন্ড ডাটা এন্ট্রি, কন্টেন্ট রাইটিং, কপি রাইটিং, ট্রান্সলেশনসহ এমনই অনেক ধরনের কাজের সমাহার রয়েছে। আপনি এসবের মধ্যে থেকে যেকোনো একটি বিষয়ে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন।
বাংলাদেশি এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট এর সুবিধা ও অসুবিধা
যদি বিল্যান্সার ডট কম এর সুবিধার কথা বলতে বলেন, তবে অবশ্যই বলতে হবে বাংলাদেশি মার্কেটপ্লেস আর এখানকার প্রায় সব বায়ার ও বাংলাদেশি সুতরাং আপনি যোগাযোগ করতে পারেন নিজস্ব ভাষাতেই , এতে করে আপনি ভালোভাবে কাজ এর খুঁটিনাটি বুঝে নিতে পারবেন।
যেখানে বাইরের মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে গেলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের ভাষা নিয়ে একটা সমস্যা হয়।
এই সাইটে আপনি কোনো বায়ারের কাজ ভালোভাবে করে তাকে যদি ইমপ্রেস করতে পারেন তাহলে মোটামুটি পরবর্তী সকল কাজ আপনি পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
এছাড়াও এই সাইট বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রোমোটেড হওয়ায় কোনো প্রকার প্রতারণার সুযোগ নেই বললেই চলে।
এই সাইটের এত সকল সুবিধার যে খুব তার বিপরীতে অসুবিধাও নেই বললেই চলে। নতুন মার্কেট হওয়ায় হয়তো বিদেশি মার্কেটের মতো অতো বেশি কাজ নেই যাবেনা তবে যা আছে তার মধ্যেই দেশের চাহিদা পূরণ সম্ভবই।
পেমেন্ট মেথড
বাইরের মার্কেট এর ক্ষেত্রে কাজ করতে গেলে দেশের ফ্রিল্যান্সাররা যে অসুবিধার মধ্যে পড়তো তা হলো তারা পেমেন্ট পেতে অনেক অসুবিধায় পড়তো। কারন বাইরের মার্কেটে কাজ করলে প্রধানত পেপ্যাল এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতো। কিন্তু এই পেপ্যাল বাংলাদেশে এভেলেভল না।
অন্যদিকে বিল্যান্সার ডট কম সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর পেমেন্ট সিস্টেম আপনি চাইলে এসএসএল কমার্জ এর মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে পারেন। তাছাড়া চাইলে আপনার ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড ,পেপ্যাল এর মাধ্যমেও টাকা নিজের কাছে আনতে পারেন। তবে এই পেমেন্ট এর বড় সুবিধা হলো আপনি খুব সহজেই ঘরে বসে বিকাশের মাধ্যমে এই মার্কেট থেকে পেমেন্ট নিতে পারেন।
কেনো এই ওয়েবসাইট থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সবার আগে বলতে হয় একটি বাংলাদেশী সাইট হিসেবে এই সাইট থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা উচিত। প্রতিবেশী দেশ ভারত ইতিমধ্যে নিজেদের মার্কেট দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। ফলে তারা নিজেদের মার্কেটেই এখন বাইরের কাজ গুলো করতে পারছে।
ঠিক আমরা আপনারাও যদি এই দেশি সাইটকে কাজ করে প্রমোট করি তবে একদিন সাইট থেকেও বাইরের দেশের কাজ গুলো করা সম্ভব হবে । ইতিমধ্যে বিল্যান্সার ডট কম মার্কেটে বাইরের থেকে কাজ আনার ব্যাপারে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে কতৃপক্ষ।
এছাড়া সহজেই ট্রাস্টেড কাজ পাওয়ার সুবিধা , নিজের কাছে থাকা সহজ পেমেন্ট সুবিধা এসব কিছু যদি গ্রহণ করতে চান তবে বিল্যান্সার ডট কম থেকেই আপনার কাজ শুরু করা উচিত বলে মনে করি।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট (বিল্যান্সার ডট কম) নিয়ে কিছু কমন প্রশ্ন
উপরে আমরা বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট বিল্যান্সার ডট কম নিয়ে বিশদ তথ্যেপূর্ন আলোচনা করলেও কিছু বেসিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন সবার মনে আসছে। চলুন তবে জেনে আসা যাক ওইসব প্রশ্নের উত্তর সমূঃ-
এই ওয়েবসাইট কি ট্রাসটেড?
অবশ্যই এই সাইটটি ট্রাস্টেড। যেখানে একটি দেশের প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত যে সাইট থেকে কাজ করার জন্য ফ্রিল্যান্সারদের উৎসাহিত করছে সে সাইটে নিঃসন্দেহে কাজ করা যায়।
মিনিমাম কত টাকা হলে উইথড্র দিতে পারব?
আসলে এই সাইটে যখনই কোনো এমপ্লোয়ার কাজের বিডের জন্য পোষ্ট করে তার সাথে সাথে সাইট তার থেকে কেটে নেয়।এবং যখন ফ্রিল্যান্সার কাজ জমা দেয় ওই টাকা তার বিল্যান্সার একাউন্টে গিয়ে জমা হয়। তারপরেই টাকা উইথড্র দিয়ে দেয়া যায়।
বিল্যান্সার ডট কম এ কম্পিটিশন কেমন?
বিল্যান্সার ডট কম নতুন বাংলাদেশি সাইট হলেও এতে বাংলাদেশি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা থেকেও অনেকে ইনকাম করে থাকেন।
নতুন সাইট হিসেবে কম্পিটিশন আছে মোটামুটি তবে আপনি যদি বায়ারের চাহিদা পূরণ করতে পারেন তবে এই সাইটে আপনার ইনকামের অভাব হবেনা।
বিল্যান্সার ডট কম এ ক্লায়েন্ট কেমন পাওয়া যায়?
জি এই সাইটে ক্লায়েন্ট আছে অনেক তবে আপনি যদি কাজের মান ভালো করতে না পারেন তাহলে ক্লায়েন্ট অনেক থাকলেও আপনি কাজ পাবেন না। অন্যদিকে তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে ক্লায়েন্ট আপনাকে খুঁজে নিয়েই তাদের কাজ করাতে দিবে।
কোন ধরণের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিল্যান্সার ডট কম বেস্ট?
বিল্যান্সার ডট কম সব ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের কাজ করার জন্য উপযোগী। তবে আপনি যদি একদম বিগিনার হোন কিংবা মিডিয়াম লেভেলের ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তবে আপনার জন্য বিল্যান্সার বেস্ট।
আপনার আসলেই দৈনিক শিক্ষা ব্লগর একজন মূল্যবান পাঠক। বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট (বিল্যান্সার ডট কম) এর আর্টিকেলটি সম্পন্ন পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে তা অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন - অন্যথায় আপনার মন্তব্য গ্রহণ করা হবে না।
comment url